১৪ মার্চ বিশ্ব পাই দিবস

১৪ মার্চ বিশ্ব পাই দিবস। গাণিতিক ধ্রুবক পাই-এর সম্মানে দিবসটি পালন করা হয়। পাই দিবস কখনও কখনও ১৪ মার্চ দুপুর ১টা ৫৯ মিনিটে পালন করা হয়। এই দিন দুপুর ১টা ৫৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডকে পাই সেকেন্ড বলা হয়।

১৪ই মার্চই কেন বিশ্ব পাই দিবস?
আমাদের বাংলাদেশে আজ সবাই তারিখটি লিখছি ১৪/৩/২০১০ইং। কিন্তু আমেরিকাতে মাসের সংখ্যা খিলে প্রথমে তারপর বসে তারিখ আর সব শেষে বসে বছর। তাই আমেরিকাতে আজকের তারিখ লিখা হচ্ছে ৩/১৪/২০১০ইং। আমরা সবাই জানি পাই এর মান 3.141592653589……। এখানে 3.14 আর আমেরিকান ফরমেটে তারিখ 3/14, তাই ১৪ই মার্চকে বিশ্ব পাই দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কোথাও কোথাও ১৪ই মার্চের দুপুর ১ টা ৫৯ মিনিট ২৬ সেকেণ্ডে এই পাই দিবলের সূচনা ধরা হয়। এক্ষত্রে ৩/১৪ >১>৫৯>২৬ অর্থাৎ দশমিকের পর সাতঘর পর্যন্ত মিলে যায়। তবে সবচেয়ে পারফেক্ট পাই দিবসটি চলে গেছে ১৫৯২সালের ১৪ই মার্চ সকাল ৬টা ৫৩ মিনিট৫৮ সেকেণ্ডে। সেদিনের হিসাবে ৩/১৪/১৫৯২ >৬>৫৩>৫৮, যা দশমিকের পরে এগারঘর পর্যন্ত মিলে গিয়েছিলো।
http://www.webschoolbd.com/

বাংলাদেশে পাই দিবস
২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে পাই দিবস উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির উদ্যোগে দেশে এই দিবস উদযাপন শুরু হয়। দেশের বেশ কিছু গণিত ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা আয়োজনের মধ্যে দিবসটি পালিত হয়। আয়োজনের মধ্যে রয়েছে পাই শোভাযাত্রা, পাই-এর মান বলা, পাই নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে পাই দিবসের শুভেচ্ছা বিনিময়। ক্রমেই এটি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

পাই কি?
বৃত্তের পরিধি (Circumference) এবং ব্যাস (Diameter) এর অনুপাতই (Ratio) হচ্ছে পাই । এই পাই একটি ধ্রুব সংখ্যা। যে কোনো বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত সর্বদাই সমান। একটি ছোট বৃত্ত মার্বেলের পরিধিকে ব্যাস দিয়ে ভাগ দিলে যে মান পাব, একটা বিশাল বৃত্ত সূর্যের পরিধিকে ব্যাস দিয়ে ভাগ দিলে সেই একই মান পাব। পরিধি এবং ব্যাসের এই ধ্রুবক অনুপাতটিকে গণিতের ক্ষেত্রে গ্রীক বর্নমালার ১৬তম অক্ষর ∏ দিয়ে প্রকাশ করা হয়।

গ্রিক বর্ণ π
যখন গ্রিক বর্ণ π পাওয়া যায় না, তখন পাই অথবা pi ব্যবহার করা হয়। এর ইংরেজি উচ্চারণ পাই হলেও গ্রিক উচ্চারণ কিছুটা ভিন্ন। আর এই ধ্রুবকের নাম π কারণ গ্রিক περιφέρειαয় (পেরিফেরেইয়া) এবং περίμετρος (পেরিমেত্রোস্) এর প্রথম বর্ণ এটি। এছাড়া এটি ইউনিকোড অক্ষর U+03C0 .

পাই কেমন করে পাই
যীশু খ্রিষ্টের জন্মেরও প্রায় দুই হাজার বছর আগেই মানুষ ধরতে পেরছিলো বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত একটি ধ্রুব সংখ্যা। মিসমীয়রা এই অনুপাতকে (৪/৩)^৪ = ৩.১৬০৪৯৩৮২৭... হিসেব করতো। ব্যাবিলনীয় সভ্রতায় এই অনুপাতের মান ধরা হতো ৩১/৮ = ৩.৮৭৫ । আর আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের এই অঞ্চলে অনুপাতটিকে √১০ = ৩.১৬২২৭৭৬৬... ধরে কাজ চালিয়ে নিতো। বাইবেলে এই অনুপাতকে উল্লেখ করা হয়েছে ৩ হিসেবে। এর পর ১৫০ খ্রিষ্টাব্দে টলেমি ৩৭৭/১২০ হিসাব ধরেন, এই হিসাবে তিনি পাইয়ের মান দশমিকের পর তিন ঘর পর্যন্ত সঠিক পেয়েছিলেন(৩.১৪১৬৬৬৬৬৬৬......)। আর ৫০০ খ্রিষ্টাব্দে জু-জং চি দশমিকের পর ছয় ঘর পর্যন্ত সঠিক মান বের করতে সমর্থ হন ৩৫৫/১১৩ = ৩.১৪১৫৯২৯২০.....। ১৭০৬ সালে উইলিয়াম জোনস গ্রীক বর্নমালার ১৬তম অক্ষর ∏ কে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত হিসেবে ব্যবহার করেন তার রচিত “সিমোপসিস পালামারিওরিয়াম ম্যাথেসিওস” বইতে। এখান থেকেই পাই কে আমরা পাই হিসেবে পাই।

১৭৬১ সালে লিন্ডম্যান প্রমাণ করেন পাই একটি অমূলদ সংখ্যা।

এখন আমরা বিশাল বিশাল অংক বা হিসাব চোখের নিমিশে করে ফেলতে পারি কম্পিউটারের সাহায্যে। কিন্তু যখন কম্পিউটার ছিলো না তখন গণিতবিদ উইলিয়াম রাদারফোর্ড তার সারাজীবন ব্যয় করেছেন পাইয়ের পিছনে। তিনি ১৮২৪সালে পাইয়ের মান ২০৮ঘর পর্যন্ত বের করেন, কিন্তু পরে দেখাগেলো এই মান ১৫৩ ঘরের পরে ভুল হয়েছে। এক নিমিশে তার জীবনের প্রায় অর্ধেক সময়ের কাজ ধুলোয় মিশে যায়।

Martin Zacharias Dase ছিলেন একজন মানুষ কম্পিউটার। কারণ তিনি চোখের নিমিশেই মাথার ভেতরে বিশাল বিশাল সব যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করে ফেলতে পারতেন। Martin Zacharias Daseকে ব্যবহার করে গণিতবিদরা দুইমাসেই পাইয়ের মান ২০০ঘর পর্যন্ত বের করে ফেলেছিলেন।

আজ কম্পিউটারের যুগে পাইয়ের মান বের করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত দশমিকের পর ২.৭ ট্রিলিয়ন ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান বের করা সম্ভব হয়েছে। অথচ পাই এর মান দশমিকের পরে মাত্র ৩৯ ঘর জানলেই বিশ্বব্রক্ষ্মণ্ডের ব্যাসার্ধ, হাইড্রোজেন পরমাণুর ব্যাসার্ধ পর্যন্ত নিখুঁতভাবে বলে দেয়া সম্ভব। তথাপি এই মুহূর্তেও হয়তো কয়েক হাজার কম্পউটার ব্যস্ত আছে এই মান আরো বেশি সংখ্যাক ঘর পর্যন্ত খেঁজে পেতে।


পাইয়ের মান মুখস্থ করা
সাম্প্রতিক সময়ে পাইয়ের মান মুখস্থ বলার রেকর্ড ক্রমেই উর্ধ্বগামী হচ্ছে। কম্পিউটারে পাই গণনার বহু পূর্ব থেকেই পাইয়ের মান মুখস্থ করা কিছু কিছু মানুষের নেশার মতো ছিল। ২০০৬ সালে আকিরা হারাগুচি নামে এক অবসরপ্রাপ্ত জাপানি প্রকৌশলী দাবি করেন তিনি ১,০০,০০০ ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান বলতে পারেন। অবশ্য এ দাবি এখনো গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃক পরীক্ষিত হয়নি। গিনেসের স্বীকৃত পাইয়ের মান বলার রেকর্ড হল ৬৭,৮৯০ ঘর, যার অধিকারী চীনের ২৪ বছর বয়স্ক স্নাতক ছাত্র লু চাও। তিনি ২৪ ঘণ্টা ৪ মিনিট সময় নিয়ে দশমিকের পর ৬৭,৮৯০ ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান শুদ্ধভাবে বলতে সক্ষম হন।
পাইয়ের মান মনে রাখার বেশ কিছু কৌশল আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল পাই কবিতা (ইংরেজিতে: piem)। এই কবিতাগুলি এমন যে, এর প্রত্যেকটি শব্দের দৈর্ঘ্য (বর্ণে) পাইয়ের একেকটি অঙ্ক প্রকাশ করে।

পাইয়ের মান ১০০১ ঘর পর্যন্তঃ
3.1415926535897932384626433832795 028841971693993751058209749445923 078164062862089986280348253421170 679821480865132823066470938446095 505822317253594081284811174502841 027019385211055596446229489549303 819644288109756659334461284756482 337867831652712019091456485669234 603486104543266482133936072602491 412737245870066063155881748815209 209628292540917153643678925903600 113305305488204665213841469519415 116094330572703657595919530921861 173819326117931051185480744623799 627495673518857527248912279381830 119491298336733624406566430860213 949463952247371907021798609437027 705392171762931767523846748184676 694051320005681271452635608277857 713427577896091736371787214684409 012249534301465495853710507922796 892589235420199561121290219608640 344181598136297747713099605187072 113499999983729780499510597317328 160963185950244594553469083026425 223082533446850352619311881710100 031378387528865875332083814206171 776691473035982534904287554687311 595628638823537875937519577818577 805321712268066130019278766111959 092164201989

শেষ করছি ছোট্ট একটি প্রশ্ন দিয়ে। আজ ১৪ই মার্চ বিশ্ব পাই দিবসে একজনের জন্ম দিন। আপনি তাকে চিনেন, কে সেই সর্ব পরিচিত ব্যাক্তি?


অনলাইন এ ক্লাস করুন একদম ফ্রী. …

প্রতিটি বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা নোট ,সাজেশান্স ও নতুন নতুন ভিডিও সবার আগে পেতে আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।

আজই জয়েন করুন বাংলাদেশের লার্নিং প্ল্যাটফর্মে ( ওয়েভ স্কুল বিডি )

শিক্ষক হিসেবে জয়েন করুন
রেকর্ডেড/লাইভ প্রোগ্রাম করতে পারো
অ্যাফিলিয়েট হতে চাইলে


Muhammad Abdullah Al Mamun

I am Abdullah Al Mamun. Lecturer of Tejgaon College dept. of Mathematics. Have completed M.S in Mathematics from Chittagong University.

Post a Comment

আপনার কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্টস বক্স এ লিখতে পারেন। আমরা যথাযত চেস্টা করব আপনার সঠিক উত্তর দিতে। ভালো লাগলে ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না। শিক্ষার্থীরা নোট ,সাজেশান্স ও নতুন নতুন ভিডিও সবার আগে পেতে আমাদের Web School BD চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব SUBSCRIBE করতে পারো।
- শুভকামনায় ওয়েব স্কুল বিডি

Previous Post Next Post